Friday, May 1, 2020

Rudra Prasanna Banerjee of Alberta University, Canada responded to Mahua Moitra's uncouth remarks about NRI doctors

মহুয়া মৈত্রের প্রতি: প্রশ্ন করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার
১৪ জন বিশিষ্ট প্রবাসী গবেষকের রাজ্যের করুণ করোণা পরিস্থিতি নিয়ে চিঠির জবাবে আনন্দবাজার পত্রিকায় তামাম প্রবাসী বাঙ্গালীকে অপমান করেছেন মহুয়া মৈত্র। তাঁর অননুকরণীয় ভাষায়, “গড়িয়াহাট থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া নতুন কুর্তা-পাজামা বা শাড়ি পরে অষ্টমীর দিন আমেরিকার কোনও ছোট শহরে প্রবাসীদের দুর্গাপুজোর মণ্ডপে বসে দেশের সমালোচনা করা আর এ রকম একটা বিশ্ব জুড়ে অতিমারির সময়ে নিজের রাজ্যকে হেয় করা এক জিনিস নয়।” এই অভিব্যক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরলেন কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনবিদ্যার তরুণ বাঙ্গালী গবেষক রুদ্র প্রসন্ন ব্যানার্জী। তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় আপন প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য আনন্দবাজার সেই চিঠি ছাপান নি।
বঙ্গদেশ প্রকাশ করছে সেই চিঠি পাঠকদের অবগতির জন্য।

মহুয়া ম্যাডাম,
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রতি আপনার যে মনোভাব আনন্দবাজার পত্রিকায় ব্যক্ত করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনার দলের সাথে সহমত পোষণকারীপ্রবাসী বাঙ্গালীদের বিভিন্ন দপ্তরে বসিয়ে দলীয় ব্যর্থতা ঢাকতে ব্যস্ত থাকেন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলেই প্রবাসীদেরকে “পরবাসী” বলে জনগণের সামনে তুলে ধরেন, এ কেমন গণতন্ত্র?
আপনার লেখায় আপনি গোটা বিশ্বের অনেক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন,  আপনাকে শুধু পশ্চিমবঙ্গের কিছু পরিসংখ্যান মনে করিয়ে দিতে চাই। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ভারতবর্ষের জনসংখ্যা ৭.৫৪ শতাংশ। ভারতবর্ষে সর্বমোট যা টেস্টিং করা হয়েছে সেই অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গে ৪৩,৭২০ জনের টেস্টিং হওয়া উচিত ছিল কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৯৮৮০ জনের টেস্টিং করা হয়েছে অর্থাৎ আমাদের রাজ্যে ৪৪২ শতাংশ কম টেস্টিং হয়েছে। আপনি বলতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন রাজ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় গবেষণাগার গুলিতে টেস্টিং করা কমিয়ে দিয়েছিল? প্রতিদিনের টেস্টিং এর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আপনারা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন? কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন লকডাউন আংশিকভাবে তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে অথচ কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি কিভাবে এতটা ভয়ানক হলো, তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে কোনরকম তথ্যই ছিলনা?  লকডাউনের প্রারম্ভে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন কিন্তু সেই সমস্ত আইসোলেশন সেন্টারের অসহায় অবস্থা জনসমক্ষে আসার পরেই মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ হল। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালের একাধিক ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ সৎকার করার খবর সামনে এসেছে। এরপরেও কি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কে প্রশ্ন করার গণতান্ত্রিক অধিকার টুকুও নেই?
আপনার লেখায় যখন আপনি বিদেশে বসবাসকারী গুজরাটি দের সাথে বাঙ্গালীদের তুলনা করলেন তাহলে কিছু বাস্তব সত্য আপনার জানা দরকার। ভেবে দেখেছেন, কোন গুজরাটি বিদেশে যায়, আর কোন বাঙালি বিদেশে যায়?  গুজরাটিরা কলকাতা, মুম্বাই যায় মূলত ব্যবসা করতে আর আমেরিকা যায় চাকরি  এবং ব্যবসা দুটোই করতে, কিন্তু বাঙালিরা? পশ্চিমবঙ্গেই ব্যাবসার সব রাস্তা বন্ধ, বাকিতে ব্যবসা, পেমেন্ট না দেয়া, দাদাগিরি, সিন্ডিকেট এর দৌলতে যারা নিজভূমে ব্যবসা করতে পারেনা, তারা বিদেশে ব্যবসা করবে কিভাবে? লোক বলে বাঙালি ব্যবসা পারে না। কত লক্ষ বাঙালি ব্যবসা শুরু করে পেমেন্ট না পেয়ে ভিখারী হয়ে গেছে জানেন?  চেষ্টা করেছেন পরিস্থিতি শুধরোতে?
এবার আসি চাকরি। কোন চেষ্টা করেছেন রাজ্যের উন্নতির?  শিল্প আনা তো দূরের কথা, আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী  ন্যূনতম সিগন্যাল দেননি শিল্পায়নের। ক্ষমতায় এসেই SEZ বন্ধ করলেন। তারপর FDI এর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে করে কেন্দ্র সরকার ছাড়লেন।  জমি দিচ্ছেন না। সাগরে বন্দর বানাতে দিলেন না নয় বছরেও! রাজ্যে কোন চার লেন রাজ্য সড়ক নেই। জাতীয় সড়ক এর জমি দিচ্ছেন না। জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ সেতু ১০ বছর এক কাঠা জমির জটে আটকে! মেট্রো রেলে সব রাজ্য ৫০% বিনিয়োগ করছে, আপনারা রাজি তো হলেনই না তার উপর জমি দিচ্ছেন না! এয়ারপোর্ট বাড়াতে দিলেন না। অন্ডাল আরেট্রোপলিস ফ্লপ। ফিনান্সিয়াল হাব আপনাদের দেখে পালিয়ে গেল! কলকাতা দিল্লি ফ্রেইট করিডর করতে জমি দিলেন না। তার মানে, না শিল্প না পরিকাঠামো। চারবার বাণিজ্য সম্মেলন করেছেন, অথচ একটা কাকও বসেনি কলকাতায়।
লোকজনের শেষ ভরসা ছিল সরকারি চাকরি। সেখানেও শুধু আপনার লোককে পয়সা দিলেই হয়। RICE, MICE ইত্যাদি কোচিং সেন্টার  উঠে যাচ্ছে,  কারণ যুবক যুবতীরা বুঝে গেছে সরকারি চাকরি পাওয়া অসম্ভব। এর পর আশা করেন আপনাদের গুণকীর্তন করবো! প্রথম IIT, IIM. IISWBM, ISI গুজরাট পায়নি, পেয়েছে আমাদের রাজ্য। তিস্তা, ফারাক্কা, ডিভিসি, কংসাবতীর মত কেন্দ্রের পয়সায় ওরা সরদার সরোবর ড্যাম বানায় নি,  বানিয়েছে নিজের পয়সায়। ওদের কেন্দ্র স্বাধীনতার পরই দুর্গাপুর, হলদিয়া, খড়্গপুর, সল্টলেক, কল্যাণীর মত শিল্পনগরী বানিয়ে দেয়নি। স্বাধীনতার পর ওরা সবই পেয়েছে ওদের মুখ্যমন্ত্রীদের সততা ও কর্মদক্ষতার জন্য। তাই ওরা ওদের রাজ্যকে ভরসা করে।
আমরা বিদেশে গবেষণা করি। বাড়িতে ফেরার ইচ্ছে কিন্তু সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন আমাদের দিদি এবং উনার পূর্বে জ্যোতি বাবু। আপনাদের চামচা প্রয়োজন, মেধা নয়। তাই পশ্চিবঙ্গের ডাক্তারদের মাইনে  এইমস এর নার্সদের মাইনের কাছাকাছি! আপনাদের উপর আমাদের কোন ভরসা নেই। আমাদের রাজ্য ব্যর্থতার যে সুমেরু পর্বত বানিয়েছে তার জুড়ি মেলা ভার।
গুজরাটে আমাদের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশী। কিন্তু ওরা সত্যি বলছে। অন্যদিকে আপনার দিদি মিথ্যে ঢাকতে লোক খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এই হাহাকারের মধ্যে উনি শুধু ভোট ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না। তাই আমরাও ওনাকে নিয়ে ভাবছি না!
পরিশেষে আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই প্রবাসী বাঙ্গালীদের অনেকাংশই ভারতীয় নাগরিক। তাই আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রশ্ন আমরা করবই। আমরা কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জকে দিয়ে ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে গণভোট দাবী করিনি যেমনটি আপনার নেত্রী সিএএ নিয়ে করেছিলেন।

ধন্যবাদান্তে
রুদ্র প্রসন্ন ব্যানার্জী
গবেষক, আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা

No comments: