আগে হলে বলতাম এস এস কে এমে পার্থ চ্যাটার্জির আই সি ইউ ১১৮ কেবিন যাঁরা পরিষ্কার করছেন সেই ঠিকা কর্মীদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দফতরে চাকরি হয়ে যাবে । এখন আপাতত বলা যাবে না । কাকে না চাকরি দিয়েছেন ! যে সেলুনে চুল কাটতেন ম্যাসাজ করাতেন দুই ভাইকেই চাকরি দিয়েছেন । যে দোকানের মিষ্টি খেয়ে বড় হয়েছেন তাঁর নাত বৌকে চাকরি দিয়েছেন । পাড়ার হ্যাবলা, ক্যাবলা কাকে না চাকরি দিয়েছেন ! নিজের দেহরক্ষীর বাড়ির দশ জনকে শিক্ষক করেছেন ! আজ সবাই ভুলে গেল !!
বেচারি পার্থ ! খারাপও লাগছে । স্ত্রী বাবলি মারা গেছেন কয়েক বছর আগে । মেয়ে আমেরিকায় জামাই সহ । এখানে একদম একা । শুধুই রাজনৈতিক জীবন । মন্ত্রীত্ব । শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তিতে । তাও মমতা নিজেই চালান ওসব দফতর । শিল্প দফতরে গিয়ে ফাইল সই করা আর সন্ধ্যে বেলা বেহালার পার্টি অফিসে গিয়ে গল্প গুজব করা । ফেরার সময় ডায়মন্ড সিটি ঘুরে ফেরা। সপ্তাহ শেষে বোলপুরের "তিতলি", কেয়ার অফ মোনালিসা । ফিরে এসে সি বি আই কবে ডাকবে, কি প্রশ্ন করবে, কি উত্তর দেওয়া হবে অনিন্দ্যর সঙ্গে পরামর্শে বসা । ডিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে প্রায় ঘাড় ধরে তাড়িয়ে দিয়েছে অভিষেক । ফলে মনটা একটু খারাপ । নামেই মহাসচিব । মমতা আর ডাকে না । যা বলার বক্সিকে দিয়ে বলায় । আর অভিষেক ক্রমাগত হিউমিলিয়েট করাচ্ছে কুণালকে দিয়ে । যা একটু মনের কথা দেখা হলে ববির সঙ্গে হয় । ববি আমার যন্ত্রণাটা বোঝে, feel করে। বলে পার্থদা আমিও ভালো নেই । অভিষেক ক্রমাগত আমকেও নীচের লেভেলে ডিস্টার্ব করায়। আমি দিদিকে বলে দিয়েছি তুমি যতদিন আছ আমিও আছি । তারপর রাজনীতি থেকে সরে যাব । দিদি থামায়, ধমকায়, আবার কাজে ফিরি । এইভাবেই চলছে পার্থদা । তুমি মন খারাপ কোরো না । মন খারাপ হলে আমায় ফোন কোরো । ববি আশ্বস্ত করল ।
#### ####
ওপরের এই ভাবনা গুলো কাল্পনিক । আই সি ইউ ১৮ তে শুয়ে পার্থ চ্যাটার্জির মনের ভাবনা গুলোই লিখলাম । এসি কেবিনে পার্থর ঘুম না আসারই কথা । প্রায় ৪০ ঘন্টার নন স্টপ জেরা । নাকতলা থেকে তারাতলা, সেখান থেকে আদালত, আদালত থেকে এস এস কে এম । দেড় দিনের ঝক্কি । ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুম । পরশু আবার আদালত । এই বয়সে পোষায় ? অর্পিতাই বা এরকম করল কেন ? বারবার বলেছিলাম টাকা এক জায়গায় না রাখতে । আমাকে কথাও দিয়েছিল এক ফ্ল্যাটে রাখবে না । বেলঘরিয়ায় দিওয়ান পাড়ায় সরিয়ে দেবে । কি যে করল, কেন যে করল । কি বলব আমার ভাগ্য ! আর অর্পিতার খবরই বা পেল কি করে । আমি যে প্রায় প্রতি রাতে ডায়মন্ড সিটি যাই খবরটা আই বি অভিষেককে দিয়েছে, কিম্বা মাঘারিয়া দিয়েছে । আর সেই খবরটা কুণালকে দিয়ে ইডিকে পাঠিয়েছে অভিষেক । অভিষেক এখন পার্টির মিডিয়া কন্ট্রোল করে । গত তিন মাস ধরে প্রায় সব প্যানেলিস্টকে বলিয়ে দিয়েছে পার্থর বিষয় উঠলে চেপে খেলতে । বেশী ডিফেন্ড না করতে । এভাবে চলা যায় ! আমি তো মমতাকে বলেই দিয়েছিলাম যে এটাই আমার শেষ টার্ম । ২৬ এর পর শরীর ঠিক থাকলে পিংলার আবাসিক স্কুলে শেষ জীবনটা কাটাব । কিম্বা বোলপুরের তিতলিতে। মমতা বারবার বলত আমি যতদিন আছি পর্থদা আপনাকে কোথাও যেতে দেব না । রাজনীতি ছাড়তে দেব না । মমতা কি জানত অর্পিতার কথা ? অবশ্যই জানত । মোনালিসার কথা ? টুকটাক জানত। অহনার কথা ? সেভাবে জানত না । দীপুর কথা । না না একদমই জানতোনা ।
মমতার এখনও আমার ওপর আস্থা আছে । আমি শ্রীঘরে, আমার জন্য এস এস কে এম রেডি রাখল । আমার মহা সচিব পদ, মন্ত্রীত্ব কিচ্ছু কেড়ে নিল না । ও তো জানে আমি পঁচাত্তর পঁচিশে খেলেছি ।আমি হরিশ চ্যাটার্জিতে ৭৫ দিয়ে ২৫ রাখতাম । ওই পঁচিশেরই অংশ হল ২১ কোটি ২০ লক্ষ । অভিষেক ভাবত আমি পঁচাত্তর রেখে পঁচিশ পাঠাতাম । আর সেই নিয়েই তো আমার পেছনে লাগলো । কুণালকে দিয়ে ইডিতে সব জানালো । আজ আমার কি অবস্থা ভেবে দেখেছে একবার ? আমার নয় পলিটিকাল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল । কিন্তু পার্টির ? বাংলার আমাদের দলের লোকেরাও তো এখন একান্তে বিশ্বাস করবে আমরা আদতে চোর । আমাদের নেতা গুলো চোর । মহা সচিব চোর, অভিষেক চোর । আর আমাদের এই বিপুল চুরি দেখে যিনি চুপ থেকে আস্কারা দিলেন সেই নেত্রীও নিশ্চিত ভাবে চোর । ঠিক হল ঘটনাটা ?
আজ বাবলির কথা বড্ড মনে পড়ছে । এস এস কে এমের এই নিভৃত ওয়ার্ডে । জিরো পাওয়ারের ঘরের বাইরে পাহারায় রয়েছে ইডির সি আর পি এফ্ । ইচ্ছে থাকলেও বেরোতে পারব না । অর্পিতা সি জি ওতে কি করছে কে জানে । ওকে কি মাটিতে শুতে দিয়েছে ? রাতে খেয়েছে ? রাতে জেরা করছে না তো ? ওদিকে মোনালিসা ? কি করছে কে জানে ! অহনা ! দীপু ! ঠিক আছে তো সবাই । ফোনটাও দেয়নি যে ফোন করব । কি যে করি । ঘড়ির কাঁটায় রাত এখন দু 'টো ।
এস এস কে এমের ১১৮ নম্বর কেবিনে বড্ড একা আমি আজ । আমি তোমাদেরই পার্থ । চিনতে পারছো ? আরে আমি সেই পার্থ, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে ??
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)
Copied from the Facebook wallpost of Sanmoy Banerjee dated 2022-07-24.
No comments:
Post a Comment