Friday, August 1, 2025


অনুদানের জন্য রাজ্যের অর্থনীতি শেষ — এবার পশ্চিমবঙ্গবাসী একটু ভেবে দেখুন!

২০১৮ সালে ১০ হাজার টাকা করে দুর্গাপুজোর ক্লাবগুলিকে রাজ্য সরকারের অনুদান দেওয়ার যে প্রথা শুরু হয়েছিল, তা আজ ২০২৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার টাকায়! এই কয়েক বছরে অনুদানের অঙ্ক প্রায় ৯০০ শতাংশ বেড়েছে। আর ক্লাবের সংখ্যাও ২৮ হাজার থেকে বেড়ে এখন ৪৩ হাজারে পৌঁছেছে। হিসেব করে দেখলে, শুধু এই বছরেই রাজ্য সরকার ৪৭৩ কোটি টাকা দিচ্ছে ক্লাবগুলিকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে বিদ্যুৎ বিলে পুজো কমিটিগুলোকে ৮০ শতাংশ ছাড়ও দেওয়া হবে।

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন: এই টাকা কোথা থেকে আসছে? পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতি আজ ভয়াবহ। রাজ্য সরকারের হাতে টাকা নেই, সরকারি চাকরির নিয়োগ বন্ধ, কলেজে ভর্তি বন্ধ, জয়েন্টের রেজাল্ট এখনো প্রকাশ পায়নি। DA দিতে পারছে না, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে, গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট নিকাশী ব্যবস্থা ভয়াবহ, সরকারি বাস ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে, এবং একাধিক প্রকল্প (যেমন পথশ্রী) আজও কাগজেই সীমাবদ্ধ। রাজ্যের ঋণ এখন ৭ লক্ষ কোটির কাছাকাছি। এই ভয়ঙ্কর ঋণের বোঝা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বাজার থেকে ধার করে এই অনুদান বিলিয়ে যাচ্ছেন।

এবার একটু মনে করুন—২০১৮ সালের আগে কি পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো হতো না? সেই সময়েও তো একের পর এক বড়ো বড়ো পূজা হতো, আর তা হতো সাধারণ মানুষের চাঁদা, স্থানীয় উদ্যোগ, ও সমাজের স্বাভাবিক সহযোগিতার মাধ্যমে। আজ সেই সব ক্লাবকে লক্ষ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়ার আসল উদ্দেশ্য কি? একটাই—ক্লাবগুলিকে সরকারি টাকায় কিনে নেওয়া। এই ক্লাবগুলো যেন ভোটের সময়ে ‘মতাদর্শগত বাহিনী’ হিসেবে কাজ করে, তারই পরিকল্পনা।

সরকারি টাকা, মানে আমাদের ট্যাক্সের টাকা, এই ভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহার হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিলের ৮০% ছাড়ও আপনি আমি পরোক্ষভাবে পরিশোধ করব, কারণ পরবর্তীতে সেই টাকা উঠে যাবে আমাদের বিলের বাড়তি হারে, বিভিন্ন কর বৃদ্ধি করে, অথবা জরিমানার অজুহাতে। ফ্রি বলে কিছুই হয় না।

পশ্চিমবঙ্গবাসী, একটু থেমে ভাবুন—আপনার সন্তান উচ্চশিক্ষার জন্য হয়তো ভর্তি হতে পারছে না, আপনার পরিবার হাসপাতালে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছে, রাস্তা ভেঙে পড়েছে, অফিসে নতুন নিয়োগ নেই, অথচ আপনার করের টাকায় মুখ্যমন্ত্রী ক্লাব কিনে নিচ্ছেন ভোটের বাজারের জন্য।

এটা কি রাজ্যের উন্নয়ন? নাকি রাজনীতির বিকৃতি? সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার, সময় এসেছে বলার—আমাদের করের টাকায় যেন আর রাজনৈতিক ব্যবসা না হয়। 

Courtesy: Adv Tarunjyoti Tewari 
Didir Kirti 
Bengal Doomed 
How West Bengal Travels

No comments:

Post a Comment